• ঢাকা
  • |
  • সোমবার ২৬শে কার্তিক ১৪৩২ বিকাল ০৫:২৫:৫৩ (10-Nov-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

সমালোচনার মুখে বিবিসির মহাপরিচালক ও বার্তাপ্রধানের পদত্যাগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দর্শকদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগের জেরে পদত্যাগ করেছেন ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (বিবিসি) মহাপরিচালক টিম ডেভি ও বার্তাপ্রধান ডেবোরা টারনেস। বিবিসির ইতিহাসে একই দিনে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ দুই কর্মকর্তার পদত্যাগ এক নজিরবিহীন ঘটনা।টিম ডেভি গত পাঁচ বছর ধরে বিবিসির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে সংস্থাটির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ও বিতর্ক বেড়ে যাওয়ায় তিনি ব্যাপক চাপের মুখে ছিলেন।ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ সোমবার একটি ফাঁস হওয়া অভ্যন্তরীণ মেমো প্রকাশ করে, যেখানে অভিযোগ করা হয়—বিবিসির প্যানোরামা প্রোগ্রামে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০২১ সালের ভাষণ ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পাদনা করে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে মনে হয় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে হামলার সরাসরি উস্কানি দিয়েছেন।প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্পের ভাষণের দুটি পৃথক অংশ সম্পাদনা করে পাশাপাশি বসানো হয়, যা বক্তব্যের অর্থ বিকৃত করে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।হোয়াইট হাউস বিবিসিকে ‘শতভাগ ভুয়া সংবাদমাধ্যম’ বলে আখ্যা দেয়, আর ট্রাম্প নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ লিখেন, ‘বিবিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা পদত্যাগ করছে, কারণ তারা আমার ভাষণ বিকৃত করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। আমার সেই ভাষণ ছিল সম্পূর্ণ নিখুঁত।’রোববার সন্ধ্যায় দেওয়া বিবৃতিতে টিম ডেভি বলেন, ‘বিবিসি নিখুঁত নয়। আমাদের সর্বদা উন্মুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক থাকতে হবে। বর্তমান বিতর্ক আমার পদত্যাগের একমাত্র কারণ নয়, তবে এটি অবশ্যই প্রভাব ফেলেছে। কিছু ভুল হয়েছে—আর মহাপরিচালক হিসেবে তার দায় আমাকেই নিতে হবে।’ডেবোরা টারনেসও রোববার রাতে বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘প্যানোরামা বিতর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা বিবিসির জন্য ক্ষতিকর। নেতৃত্বের জায়গায় দায় শেষ পর্যন্ত আমারই। তবে বিবিসি নিউজ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট—এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুল।’তিনি তিন বছর ধরে বিবিসির নিউজ অ্যান্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।দ্য টেলিগ্রাফ-এর প্রকাশিত মেমোটি লিখেছিলেন মাইকেল প্রেসকট, যিনি বিবিসির সম্পাদকীয় মানদণ্ড কমিটির স্বাধীন উপদেষ্টা ছিলেন।তিনি শুধু প্যানোরামা-র বিষয়ই নয়, ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু নিয়েও সম্পাদকীয় পক্ষপাতের অভিযোগ তোলেন। তাঁর ভাষায়, ‘বিবিসির ব্যবস্থাপনা গুরুতর সমস্যা দেখা দিলে প্রায়ই নীরব থাকে, যা হতাশাজনক।’মেমোতে আরও উল্লেখ করা হয়, বিবিসি আরবিক বিভাগের ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে ‘পদ্ধতিগত পক্ষপাতের সমস্যা’ সমাধানে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।পদত্যাগের পরও বিবিসি নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েছে। সাবেক কর্মকর্তারা সংস্থাটির প্রতিক্রিয়া প্রদানের ধীরগতি ও সম্পাদকীয় ব্যর্থতার সমালোচনা করেছেন।বিবিসির টেলিভিশন নিউজ বিভাগের সাবেক প্রধান রজার মোসি বলেন, ‘বিবিসি অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় খুব ধীর ছিল। ট্রাম্পের ভাষণ সম্পাদনার ঘটনা কোনোভাবেই ন্যায্যতার মধ্যে পড়ে না।’অন্যদিকে চ্যানেল ৪-এর সাবেক সংবাদপ্রধান ডরোথি বার্ন বলেন, ‘বিবিসি শুধু সম্পাদনায় মৌলিক ভুলই করেনি, বরং ক্ষমা চাইতেও অস্বাভাবিকভাবে দেরি করেছে—এটি অদক্ষ ব্যবস্থাপনার দৃষ্টান্ত।’বিবিসির চেয়ারম্যান সামির শাহ বলেন, ‘এটি বিবিসির জন্য এক দুঃখের দিন। টিম ডেভি বোর্ডের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছিলেন, তবে তার ওপর চলমান চাপের বিষয়টি আমরা বুঝতে পারছি। বোর্ড তার সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছে।’২০ বছর ধরে বিবিসিতে কর্মরত টিম ডেভি জানান, তিনি ‘শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে’ নতুন মহাপরিচালকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন, যাতে ২০২৭ সালে শেষ হতে যাওয়া রয়্যাল চার্টার নবায়নের আলোচনায় নতুন নেতৃত্ব কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।ব্রিটিশ সংস্কৃতিমন্ত্রী লিসা নন্দী টিম ডেভিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘তিনি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সময়ে বিবিসিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিবিসি আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠান। বিশ্বস্ত সংবাদ ও উচ্চমানের প্রোগ্রামিং এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি।’