• ঢাকা
  • |
  • বুধবার ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩২ ভোর ০৫:১০:৪৩ (26-Nov-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

সরকারি সার কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগে বঙ্গ ট্রেডার্সের ৩ কর্মকর্তা আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারী সার আত্মসাৎ করে কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে বঙ্গ ট্রেডার্স লিমিটেড ও ডেইলি ট্রেডিং কোং নামক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। সরকারের ভর্তুকি দেওয়া সার বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির করে কালোবাজারে বিক্রি করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি।স্থানীয় সার ব্যবসায়ীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত রোববার (২৩ নভেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে যশোর জেলার অভয়নগর থানাধীন সার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নিচতলায় অবস্থিত মেসার্স বঙ্গ ট্রেডার্স লিমিটেড ও ডেইলি ট্রেডিং কোং নামক অফিসে যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) অফিসার ইনর্চাজের নেতৃত্বে এসআই বাবলা দাস, এসআই মো. কামাল হোসেন অভিযান চালিয়ে ৪ হাজার ৮৪০ বস্তা সারসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। যার আনুমানিক  মূল্য দুই কোটি বায়ান্ন লক্ষ ঊনানব্বই হাজার টাকা।গ্রেফতারকৃতরা হলেন বঙ্গ ট্রের্ডাসের ব্যবস্থাপক, চাঁদপুরের শাহারাস্তি থানার বারুলিয়া গ্রামের সুমন মজুমদার (৩৫), বঙ্গ ট্রের্ডাসের উপ ব্যবস্থাপক, চট্টগ্রামের টাইগারপাস বটতলা রেলওয়ে কলোনী এলাকার বাবুল দাস (৩৬) এবং বঙ্গ ট্রের্ডাসের সহকারী ব্যবস্থাপক, নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার উইলসন রোডের বাসিন্দা মাসুম বিল্লাহ (৪২)।২৪ নভেম্বর সোমবার তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে যশোর জেলার অভয়নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ডিবি পুলিশ জানায়, যশোর জেলার অভয়নগর থানাধীন সর্দার জুট মিল ঘাট, মক্কা ঘাট এবং বড়বাড়ি ঘাট থেকে নীলফামারী, রংপুর, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, রাজবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সরকারী (বিএডিসি) গোডাউনের সার পৌঁছানোর নামে কালোবাজারে বিক্রি করছে সার পরিবহন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স বঙ্গ ট্রেডার্স লিমিটেড ও ডেইলি ট্রেডিং কোম্পানী। বঙ্গ ট্রেডার্স লিমিটেড ও ডেইলি ট্রেডিং কোম্পানীর অফিস কক্ষে বাবুল দাসের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত টেবিলের ড্রয়ার থেকে নগদ ২২ লাখ ২৪ হাজার টাকা উদ্ধার করে।কালোবাজারে সরকারী সার বিক্রির অবশিষ্ট টাকা তাদের কোম্পানী বঙ্গ ট্রেডার্সের একাউন্টে জমা দিয়েছে তারা পুলিশকে জানিয়েছে।গ্রেফতারকৃতরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, বঙ্গ ট্রেডার্স লিমিটেড ও ডেইলি ট্রেডিং কোম্পানীর মালিক একজনই। মালিকের নাম মো. জসিম উদ্দিন। তাদের মতো আরো ৪২ জন কর্মকর্তা রয়েছে। যারা প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে দীর্ঘদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন জেলায় কালোবাজারে সরকারী সার বিক্রি করে আসছে।এর আগে এই চক্রটি গত ৮ নভেম্বর যশোর থেকে গভীর রাতে চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলার গোষ্টবিহার গ্রামে ২০ টনের একটি ট্রাক সার নিয়ে কালোবাজারে বিক্রির সময় উপজেলা কৃষি বিভাগের হাতে ধরা পড়ে। ওই সারবোঝাই ট্রাকটি স্থানীয় ব্যবসায়ী শামীম রেজার গুদামে যাচ্ছিল। পরে ব্যবসায়ী শামীম রেজাকে এক মাসের কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে স্থানীয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এই চক্রটি দেশের ঘাটগুলোতে জাহাজ থেকে নামানো সরকারী সার প্রতিনিয়তই কালোবাজারে বিক্রি করছে বলে ডিবি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে ।তারা সরকারী সার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাগজে-কলমে সংরক্ষণ দেখিয়ে গুদামে সরবরাহের কথা বলে ট্রাকে করে নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে কম মূল্যে বিক্রি করে থাকে।এদিকে গত ১১ নভেম্বর (মঙ্গলবার) পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিয়ার পাড়া গ্রামে সরকারি সার কালোবাজারে বিক্রির সময় বিসিআইসি ডিলার সেলিম হোসেনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত ৯ অক্টোবর সকালে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় বিএডিসি ডিলারের সার কালোবাজারে বিক্রি করার সময় বঙ্গ ট্রেডার্স লিমিটেডের একজন কর্মকর্তাকে আটক করেছে জনতা। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করে।চক্রটি গত ৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার রামপুরা এলাকায় পাচারের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি ট্্রাক সার কালোবাজারে বিক্রির সময় স্থানীয় লাবনী ট্রের্ডাসের দায়িত্বে থাকা মেসার্স সজিব ট্রের্ডাসের মালিক সাইদুল ইসলাম জনতার হাতে আটক হন। সেখান থেকে কালোবাজারে বিক্রেতা বঙ্গ ট্রেডার্স লিমিটেডের কর্মকর্তা পরিমল বর্মন পালিয়ে যান। পরে খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সারগুলো জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়।গত ১২ নভেম্বর (বুধবার) দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে রংপুরের তারাগঞ্জে অবৈধভাবে ডিএপি সার পাচারের সময় জনতার হাতে আটক হন বঙ্গ ট্্েরডার্সের দুই জন কর্মকর্তা। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাদের ৮০ হাজার টাকা জরিমানা এবং এক হাজার দুইশত বস্তা ডিএপি সার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এছাড়া গত ১৬ নভেম্বর রংপুর জলোর তারাগঞ্জ বাজারের অগ্রণী ব্যাংক সংলগ্ন এলাকায় ৬শ বস্তা ডিএপি সার নীলফামারীর জলঢাকায় পাচারের চেষ্টা করছিল বঙ্গ ট্্েরডার্সের একজন কর্মকর্তা। স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা মিনি ট্রাক আটক করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল রানা।তিনি পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় ঙ্গ ট্রেডার্স লিমিটেডের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান পালিয়ে যান। এ সব অভিযোগের বিষয়ে জানতে মেসার্স বঙ্গ ট্রেডার্সের জেনারেল ম্যানেজার মো. বাহাউদ্দিনকে মোবাইলে কল করা হলে তিনি ধরেননি। পরে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।