• ঢাকা
  • |
  • সোমবার ১৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩২ রাত ০৮:৪০:২২ (01-Dec-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

বয়স জটিলতায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারছে না শত শত শিক্ষার্থী

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: জয়পুরহাট জেলায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে অনলাইন ভর্তি আবেদনকে কেন্দ্র করে চরম জটিলতা তৈরি হয়েছে। বয়সসীমা-সংক্রান্ত কঠোর নীতিমালার কারণে জেলার বহু শিক্ষার্থী অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়ায় ‘অযোগ্য’ বিবেচিত হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি আবেদন করতে হলে শিক্ষার্থীর বয়স ১১ থেকে ১২ বছরের মধ্যে থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অনেক শিশুর বয়স ১২ বছর অতিক্রম করার পর মাত্র কয়েক দিন বা কয়েক মাস বেশি হওয়ায় অনলাইন সিস্টেমে তাদের আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না। এতে অনেক অভিভাবকরা উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। আগামী ৫ ডিসেম্বর অনলাইন আবেদনের শেষ তারিখ ঘনিয়ে আসায় এই হতাশা আরও বেড়েছে।জয়পুরহাট জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সামনে ও সাইবার ক্যাফেগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, অভিভাবকেরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদন করার চেষ্টা করছেন। অনেকে একাধিকবার চেষ্টা করেও একই ‘অযোগ্য’ বার্তা পাচ্ছেন। কারও কারও দাবি, বয়সের সীমা পেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি একটি সাধারণ প্রশাসনিক কারণে হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু এর দায়ভার শিশুদের ওপর চাপানো অমানবিক। তাদের মতে, এটা শিশুদের ভবিষ্যতের সঙ্গে অন্যায় আচরণ। বয়সসীমা সামান্য শিথিল করা বা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জোরালোভাবে উঠছে।কালাই পৌর শহরের ছয় ভাই মার্কেটের মাহমুদ অনলাইন হাউজের মালিক মাহমুদুল হক জানান, গত কয়েক দিনে তিনি অন্তত দেড়শ শিক্ষার্থীর আবেদন বয়স-সংক্রান্ত কারণে জমা দিতে পারেননি। তার মতে, নীতিমালার এই কঠোরতা অনেক শিশু এবং পরিবারের জন্য দুর্ভোগ ডেকে আনছে। একই অভিযোগ করেন অভিভাবক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, তার ছেলের জন্মসনদ অনুযায়ী জন্ম তারিখ ৩ মে ২০১৩ কিন্তু বয়স সীমার বাইরে থাকায় সিস্টেম আবেদন গ্রহণ করছে না। এতে তিনি হতাশ ও ক্ষুব্ধ।শিক্ষার্থী রাফি হাসান প্রতিদিন বাবার সঙ্গে সাইবার ক্যাফেতে যাচ্ছে। তার অভিমান, সবাই ফরম পূরণ করতে পারছে, কেবল তারটা হচ্ছে না। এখন তার প্রশ্ন, ‘আমি কেন ভর্তি হতে পারব না?’সরাইল গ্রামের আরেক শিক্ষার্থী মো. মেফতাহুল  কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ‘আমি তো দোষ কিছু করিনি। জন্মসনদ তো আমি বানাইনি। এখন কি আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে?’শিক্ষার্থী রুমাইয়া আখতার জানায়, তার বয়স মাত্র ১৭ দিন বেশি হওয়ায় আবেদন করতে পারছে না। অন্যদিকে শিক্ষার্থী ইমন হোসেন বলেছে, ‘ফরম পূরণের পর দেখায়, আমি যোগ্য নই। আমরা তো একই শ্রেণিতে পড়েছি। আমি কেন অযোগ্য?’কালাই সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, তাদের বিদ্যালয়ের ১৭ জন শিক্ষার্থীর আবেদন গ্রহণ হয়নি। তিনি বয়স সংশোধনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন পাঠিয়েছেন।একই পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন জয়পুরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান তালুকদার। তাঁর বিদ্যালয়ের অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী এ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতে রিট করার প্রস্তুতি নিয়েছেন।কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামিমা আক্তার জাহান জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা তাকে জানিয়েছেন, বয়স সংশোধনের জন্য অভিভাবকেরা ইউপি কার্যালয়ে ভিড় করছেন। বয়সসীমা নিয়ে সৃষ্ট এই জটিলতায় বহু শিক্ষার্থী অনিশ্চয়তায় পড়েছে। তিনি বলেন, দ্রুত সমাধান না হলে অনেক শিশু এ বছর ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারে, যা মোটেও কাম্য নয়।জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন যে, বয়স সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বহু শিক্ষার্থী অনলাইনে আবেদন করতে পারেনি। তিনি আরো বলেন, ভর্তি নীতিমালা সম্পূর্ণভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করেছে এবং অনলাইন সিস্টেম সেই নির্দেশনা অনুসরণেই পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে এই নীতিমালা পরিবর্তন বা সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই। তবে তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন।