লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি: সুদানের আবেই এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন। শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদের তালিকায় রয়েছেন নাটোরের লালপুর উপজেলার আরবাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের সন্তান কর্পোরাল মাসুদ রানা (৩০)। তার মৃত্যুতে পুরো এলাকা জুড়ে বইছে হয়েছে শোকের মাতম।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) ১৩ ডিসেম্বর শনিবার এক খুদে বার্তায় জানায়, সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালায়। এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী নিহত হন এবং অন্তত আটজন আহত হন। হামলার পরও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলমান রয়েছে এবং পুরো এলাকা এখনো অস্থিতিশীল।


শহীদ মাসুদ রানা লালপুর উপজেলার আরবাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের সাহার উদ্দিনের ছেলে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। মাসুদ রানা ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তার মেজো ভাই মনিরুল ইসলাম ২০১২ সালে এবং ছোট ভাই রনি আলম ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সর্বশেষ শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার আগে মাসুদ রানা যশোর ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন।
গত ৭ নভেম্বর স্ত্রী ও আট বছরের একমাত্র কন্যা মাগফিরাতুল মাওয়া আমিনাকে রেখে শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দিতে সুদানে যান তিনি। ২০০৬ সাল থেকে প্রায় ১৯ বছর ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন মাসুদ রানা। শান্তিরক্ষী হিসেবে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার স্বপ্ন নিয়েই এক মাস সাত দিন আগে বিদেশের মাটিতে দায়িত্ব নিতে গিয়েছিলেন বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।
শনিবার তার মৃত্যুর খবর প্রথম জানতে পারেন তার ছোট ভাই সেনাসদস্য রনি আলম। পরে তিনি বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যদের জানান। খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই পুরো গ্রামজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। বাড়ির উঠোনজুড়ে কান্না আর হাহাকারে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।
শহীদের মা মর্জিনা খাতুন ছেলের মৃত্যুর খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, গতকালই ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। ডিউটির কষ্টের কথা জানতে চাইলে সে বলল, মা এখন আর কষ্ট নাই, ডিউটি কম। আমাকে ভালো থাকতে বলে ছেলে নিজেই চলে গেল।
স্ত্রী আসমাউল হুসনা আঁখিও স্বামীর মৃত্যুসংবাদে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন। কথা বলতে গিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
মাসুদ রানার মৃত্যুর খবরে বোয়ালিয়াপাড়া ও আশপাশের গ্রাম স্তব্ধ হয়ে গেছে।
প্রতিবেশীরা জানান, শান্ত ও মিশুক স্বভাবের মানুষ ছিলেন মাসুদ রানা। চাকরি পাওয়ার আগে পরিবারের আর্থিক অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। তবে তিন ভাই চাকরি পাওয়ার পর পরিবারে কিছুটা স্বস্তি ফেরে। পরিবারের সুখের স্বপ্ন নিয়েই পাড়ি জমান শান্তিরক্ষী মিশনে।
শহীদ মাসুদ রানার ছোট ভাই রনি আলম বলেন, দেশের জন্য আমার ভাই শহীদ হয়েছেন। এই আত্মত্যাগে আমরা গর্বিত, যদিও শোক ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জুলহাস হোসেন সৌরভ বলেন, ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারের পাশে থাকার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available