• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ১৪ই পৌষ ১৪৩২ সন্ধ্যা ০৬:৪০:৪৫ (28-Dec-2025)
  • - ৩৩° সে:

কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ, ৪০০ লিটার রাসায়নিক উদ্ধার

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি: ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে একটি মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক ও ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিন নারীকে আটক করা হয়েছে। মূল সন্দেহভাজন শেখ আলামিন পলাতক রয়েছেন। বিস্ফোরণের পেছনে রাসায়নিক বিক্রিয়া বা বিস্ফোরক ব্যবহারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।২৭ ডিসেম্বর শনিবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।এর আগে ২৬ ডিসেম্বর শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় উন্মুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার একটি একতলা ভবনে ভয়াবগ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত চারজন আহত হন।সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, “বিস্ফোরণের পরপরই আমরা এন্টি টেরোরিজম ইউনিটকে অবহিত করি। পাশাপাশি সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলকে ক্রাইম সিন হিসেবে চিহ্নিত করে।” বিস্ফোরনের পর ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে একটি মনিটর, বিভিন্ন ধরনের লিকুইড রাসায়নিক এবং চারটি ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে।পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে মাদ্রাসাটি শেখ আলামিন ও তার স্ত্রী আসিয়া পরিচালনা করে আসছিলেন। ভবনের চারটি কক্ষের মধ্যে দুটি মাদ্রাসার কাজে ব্যবহৃত হতো এবং বাকি দুটি কক্ষে তারা পরিবারসহ বসবাস করতেন। বিস্ফোরণের সময় আসিয়া ও তাদের তিন সন্তান ভবনে ছিলেন। আহতদের মধ্যে আছেন আসিয়া এবং তার তিন সন্তান—যাদের বয়স যথাক্রমে ১০ বছর, ২ বছর ও ৬ মাস।পুলিশ সুপার বলেন, “বিস্ফোরণের পর আলামিন তার স্ত্রী ও সন্তানদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু সেখানে স্ত্রী ও সন্তানদের রেখে আলামিন আত্মগোপনে চলে যান।”ঘটনার পর ঢাকা জেলা ডিবির সমন্বয়ে কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে একাধিক টিম অভিযান শুরু করেছে।পুলিশ জানায়, আলামিনের স্ত্রী আসিয়া ও তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে গতকাল দিবাগত রাতে ঢাকার বাসাবো এলাকা থেকে আসমানি খাতুন নামে আরেক নারীকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তিনজনকেই গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।আলামিনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, শেখ আলামিনের নামে ঢাকার আশপাশের কয়েকটি জেলায় মামলা রয়েছে। তিনি অতীতে দুবার গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং কারাগারেও ছিলেন।”২০২৩ সালে জামিনে মুক্তির পর তিনি প্রথমে অটোরিকশা ও পরে উবার চালক হিসেবে কাজ করতেন বলেও জানান পুলিশ। গ্রেফতারের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে মামলার কাগজপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে।বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে পুলিশ সুপার বলেন, “ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে, তবে এখনও লিখিত মতামত দেয়নি। ঘটনাস্থলে ব্যাপক রাসায়নিক মজুদ এবং ককটেল সদৃশ বিস্ফোরক পাওয়া গেছে।”সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ও এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের প্রাথমিক ধারণা, রাসায়নিক বিক্রিয়া অথবা বিস্ফোরকজাত দ্রব্যের কোনো প্রতিক্রিয়ার কারণেই বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে।পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলে বিভিন্ন কন্টেইনারে আনুমানিক ৪০০ লিটারের মতো লিকুইড রাসায়নিক পাওয়া গেছে। কিছু কন্টেইনারে ‘হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড’ লেখা ছিল। ধ্বংসস্তূপের কারণে এখনো পুরো সিজার লিস্ট চূড়ান্ত করা যায়নি।জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, “এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। ঘটনাস্থলে হ্যান্ডকাফ, পুরনো বেল্টসহ কিছু সন্দেহজনক সামগ্রী পাওয়া গেছে। এগুলো পরীক্ষা করা হচ্ছে।”জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নাশকতার কোনো পরিকল্পনা ছিল কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে উত্তরে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, এমন বিষয়কে সামনে রেখে তদন্তে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত বলার মতো কিছু নেই।পুলিশের তথ্যমতে, মুফতি হারুন নামে একজন ব্যক্তি মাদ্রাসার অন্যতম পরিচালক ছিলেন এবং বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তিনি বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন।পুলিশ সুপার আরও বলেন, “প্রাথমিকভাবে বোঝা যাচ্ছে, তারা কোনো ধরনের বিস্ফোরকজাত দ্রব্য নিয়ে কিছু একটা করছিল। তবে এটিকে এখনই নাশকতা বলা যাচ্ছে না।”মামলা দায়েরের পর বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট, রাসায়নিকের উৎস, প্রশিক্ষণ বা ডায়াগ্রামের কোনো আলামত আছে কি না—সবকিছু খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।তিনি বলেন, “দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ রাজধানীর একেবারে কাছে ও জনবহুল এলাকা। সৌভাগ্যক্রমে সময় ও দিনের কারণে বড় প্রাণহানি হয়নি।” নাগরিকদের উদ্দেশে তিনি আহ্বান জানান, আশপাশের ভাড়াটিয়া বা সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড নজরে এলে দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে।আহতদের মধ্যে আলামিনের বড় ছেলে উম্মায়ের তুলনামূলকভাবে বেশি আহত হলেও কারও বড় ধরনের বার্ন ইনজুরি নেই। অধিকাংশ আঘাত ধ্বংসাবশেষ ধসে পড়ার কারণে হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জেলার ইতিহাস


দর্শনীয় স্থান